ইমাম খাইর, সিবিএন:
‘মা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আমি হয়তো আর বাঁচবো না’ -এটাই ছিল ঢাকা ক্যামব্রিয়ানের ছাত্রী সুদীপ্তা চৌধুরী ইমুর মায়ের সাথে মুঠোফোনে শেষ কথা। সুদীপ্তার মা গোপী চৌধুরী বলেন, আমার মেয়ে মরেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আমার আত্না শান্তি পাবে। ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রতিবেদককে মা গোপী চৌধুরী কথাগুলো বলছিলেন।

তিনি আরো বলেন, সুদীপ্তা তার বান্ধবির বাসায় বেড়াতে যাবে বলে সকালে ঘর থেকে বের হয়। দুুপর পর্যন্ত যোগাযোগ না করায় তাকে ফোন করলে ওপার থেকে ভাঙ্গা ও আতঙ্কগ্রস্ত ভাষায় উত্তর পাচ্ছিলাম। মেয়ের আওয়াজ শুনে আমার ভয় হচ্ছিল। কিন্তু বেশী শব্দ পাইনি। কয়েকটি শব্দ শেষে ওপারের সাড়া আর নেই। ফোন করেও রিসিভ হয়নি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সুদীপ্তার বাবাকে জানাই।

সুদীপ্তা চৌধুরীর বাবা সনজীব চৌধুরী প্রকাশ ঝুলন চৌধুরী বলেন, আমার মেয়ের মুঠোফোন বেজে ওঠলে ওপার থেকে জবাব আসে, ‘সুদীপ্তার অবস্থা ভাল না। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।’ তুমি কে? জিজ্ঞেস করলে ‘আমি জেকি’ বলে উত্তর দেয়। কিন্তু সুদীপ্তার মোবাইল তোমার হাতে কেন? জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। অভিযুক্ত জেকি কুমার সুশীল শহরের গোলদীঘির পাড় এলাকার মৃত সনজিত কুমার এর ছেলে। সে বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছে।

সুদীপ্তার জেঠতো বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ছাত্রী দেবস মিতা চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালের ৫ আগষ্ট সুদীপ্তার জন্মদিন ছিল। ওই দিন অনুষ্ঠানের কক্ষ থেকে জেকিকে বের করে দেয় বান্ধবীরা। তখন থেকে জেকি ক্ষুব্ধ ছিল। সুযোগ নিয়ে খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। সুদীপ্তার বান্ধবীদের ধারণা, জেকির প্রেমের প্রস্তাব নাকচ করায় নির্মম ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। নিহত সুদীপ্তা চৌধুরী ঢাকা ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পাশাপাশি সে বিএনসিসির ক্যাডেট ছিল। তার বাড়ী কক্সবাজার শহরের বড় বাজার এলাকায়।

এদিকে মেধাবী ছাত্রী সুদীপ্তা চৌধুরীর খুনের ঘটনায় বাবা সনজীব চৌধুরী প্রকাশ ঝুলন চৌধুরী বাদী হয়ে ২৭ ডিসেম্বর রামু থানায় মামলা করেন। জি.আর মামলা নং-৪৩২/১৭। মামলায় একমাত্র আসামী জেকি কুমার সুশীল। আদালতের নির্দেশে জেকিকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ডে আসামী অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এস.এম মিজানুর রহমান। তদন্তের স্বার্থে প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছেনা।

তবে ঘটনার দিন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য ছিল, চলার পথে অকস্মিকভাবে মোটর সাইকেলের পেছন দিক থেকে পড়ে গিয়ে সুদীপ্তা মারা যায়।

গত ২৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন মারমেইড বীচ রিসোর্ট এলাকায় সুদীপ্তা নিহত হয়।